May 18, 2024, 9:10 pm

প্রণোদনা বাড়ানোর কারণে চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ২৩ হাজার টন আমন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী
প্রণোদনার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অধিক আমন ধান আবাদ হয়েছে। এ বছর জেলার চার উপজেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ১১৯ দশমিক ৩১ টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে। তবে গত ১৭ নভেম্বর সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহের পরিমাণ রয়েছে শূন্যের কোঠায়।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মোট আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৮৭ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬৭ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৬ হাজার ৫১২, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৫ ও জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৩ দশমিক ৪৯৯ টন ধরা হয়েছে। সেই মোতাবেক এ জেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ১১৯ দশমিক ৩১ টন আমন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্যে আরো জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রি-ধান ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৯, ৫১, ৫২ ও বিনা-৭ এবং স্বর্ণা জাতের ধান আবাদের জন্য ২০২০ সালে ৩ হাজার বিঘা জমিতে ফসল ফলানোর প্রক্রিয়া করে ৩ হাজার কৃষককে বীজ ও সারসহ ২৪ লাখ ৬ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয়। ২০২১ সালে ২ হাজার বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য ২ হাজার কৃষককে ৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা ও ২০২২ সালে ১০ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য ১০ হাজার ৫৫০ কৃষককে ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। ফলে ধানের আবাদ বেড়েছে বলে অধিদপ্তর দাবি করেছে।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নতুন তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক লিটন আলী, কৃষক হারুন অর রশিদ, পুরাতন তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম ও বাঁকা গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিনা-৭, ব্রি-৪৯ ও ধানী গোল্ড জাতের ধান ১ হাজার ৩১০ থেকে ১ হাজার ৩২০, স্বর্ণা ও ব্রি-৫১ জাতের ধান ১ হাজার ১৭০ থেকে ১ হাজার ২০০, ব্রি-৭১ ও ব্রি-৭৫ জাতের ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের বাজারদর বেশ ভালো বলে তারা জানিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, এবার বৃষ্টির কারণে ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া স্থিতিশীল হওয়ায় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য জেলায় খরার কারণে সেচ ব্যবস্থা আবাদ সহায়ক না থাকলেও চুয়াডাঙ্গা জেলা ছিল সহায়ক। এখানকার কৃষকরা ভালো সেচ সুবিধা পেয়েছেন। সময়মতো ভালো জাতের ধানবীজ ও সার পেয়েছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা আবাদের ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তাদের যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছিলেন। তাছাড়া পোকামাকড়ের উপদ্রবও খুব কম ছিল। পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থার কারণে এবার আমন ধান উৎপাদন বেশ ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ আমন মৌসুমে এ জেলার চারটি উপজেলায় মোট ২ হাজার ২৫৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সদর উপজেলায় ৩৪১ টন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৫৮, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪৫৯ ও জীবননগর উপজেলায় ৩৯৭ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। চারটি উপজেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার ৮৩৪ টন। সদর উপজেলায় ৪৮৩ টন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৬১২, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩২৫ ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৪১৪ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ধানের সংগ্রহ মূল্য ২৮ ও চালের সংগ্রহ মূল্য ৪২ টাকা। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। তবে গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ শূন্যের কোঠায় ছিল।

সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করা প্রসঙ্গে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক নূরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ধানের দাম প্রতি মণ ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু গ্রামের আড়তে প্রতি মণ ধান আমরা বিক্রি করছি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা দরে। ফলে আমাদের পরিবহন ব্যয় বেঁচে যাচ্ছে, তেমনি সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে যাওয়ার সময় পরিবহন ব্যয় হয়। ধান গুদামে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যা দেখিয়ে হয়রানি করা হয়। অবশেষে গুদামে দায়িত্বরতদের উেকাচ দিয়ে ধান বিক্রি করতে হয়। যা অত্যন্ত খারাপ।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চালকল মালিক বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের বিস্তর ফারাকের কারণে চাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ লোকসান করে চাল সরবরাহ করা দুরূহ হচ্ছে। সরকার প্রতি মণ চাল ১ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারে প্রতি মণ চাল ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’

মাস পেরিয়ে গেলেও ধান-চাল সংগ্রহ কেন শূন্যের কোঠায়—এ প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সংগ্রহ অভিযানের সময় আবারো বাড়ানো হবে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি ধান-চাল সংগ্রহ করতে। কিন্তু এখনো কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি।।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :